"নিশ্চয়ই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না।" -(সূরা বাকারাহ, আয়াত -৬)
যারা সত্যকে গোপন করতে অভ্যস্ত, তাদের ভাগ্যে এই আছে যে, তারা কখনও সেই ওয়াহীকে বিশ্বাস করবে না, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে । যেমন অন্য এক স্থানে বলা হয়েছে- "যেসব লোকের উপর আল্লাহর কথা সাব্যস্ত হয়ে গেছে, তারা ঈমান আনবে না, যদিও তাদের কাছে সমস্ত নিদর্শন এসে যায়, যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে।"
আরো এক স্থানে আছে- "হে নবী (সা:)! তুমি তাদের জন্য আফসোস করো না। তোমার কাজ তো শুধু রিসালাতের হক্ব আদায় করে দেওয়া। যারা মেনে নিবে তারা ভাগ্যবান, আর যারা মানবে না তবে ঠিক আছে, তোমার দায়িত্ব ঠিক মতোই পালন হয়ে গেছে। আমি অনতি বিলম্বে তাদের হিসাব নিয়ে নিবো।"
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ ব্যাপারে খুবই আগ্রহ ছিলো যে, সবাই যেন ঈমানদার হয়ে যায় এবং হিদায়াত কবুল করে নেয়। কিন্তু মহান প্রভু বলে দিলেন যে, এ সৌভাগ্য প্রত্যেকের জন্য নয়, এ দান ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যার ভাগ্যে এর অংশ পড়েছে সে তোমার (নবী (সা) এর) কথা মেনে নিবে। আর যে হতভাগা সে কখনও মানবে না।
অর্থাৎ যারা কুরআনুল কারীমকে অস্বীকার করে, এবং বলে থাকে আমরা পূর্বের কিতাবে বিশ্বাসী, তারা প্রকৃতপক্ষে পূর্বের কিতাবেও বিশ্বাসী নয়।
তথ্যসূত্র:
-
তাফসীর ইবনে কাছীর
'আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করো।'-(সূরা ফাতিহা, আয়াত- ৬)
একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, এ আয়াতে কি পরিমাণ সুক্ষ্মতা ও প্রকৃষ্টতা রয়েছে! প্রথমে (পূর্বের আয়াতগুলোতে) বিশ্ব প্রভুর যথোপযুক্ত প্রশংসা ও গুণকীর্তন, অতঃপর নিজের ও মুসলিম ভাইদের জন্য আকুল প্রার্থনা। প্রার্থিত বস্তু লাভের এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা। এ উত্তম পন্থা নিজে পছন্দ করেই মহান আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দাদের দেখিয়ে দিলেন।
আর আল্লাহর কিতাব এই কুরআনুল কারীমই হচ্ছে শক্ত রশ্মি বা রজ্জু, জ্ঞানপূর্ণ উপদেশ এবং সরল পথ বা সীরাতুল মুস্তাকিম (মুসনাদ-ই-আহমদ, জামে তিরমিযী)। হযরত আলীরও (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এই অভিমত। এ বিষয়ে আল্লাহ ভালো জানেন ।
হযরত ইবনে আব্বাসের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা হচ্ছে যে, হযরত জীবরাঈল (আ:) বলেছেন, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! বলুন, 'আমাদেরকে হিদায়াত বিশিষ্ট পথের ইলহাম করুন' এবং তা হলো আল্লাহর দ্বীন, যার মধ্যে কোন বক্রতা নেই। তাঁর নিকট থেকে এ কথাও বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে 'ইসলাম'। হযরত ইবনে মাস'ঊদসহ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) আরও বহু সাহাবী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতেও এ তাফসীরই নকল করা হয়েছে।
হযরত জাবির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এর ভাবার্থ হচ্ছে 'ইসলাম' যা আকাশ ও জমিন এর মধ্যবর্তী সমুদয় বস্তু হতে প্রশস্ততম। ইবনে হানাফিয়্যাহ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে, সেই দ্বীন যা (ইসলাম) ছাড়া অন্য দ্বীন গ্রহণীয় নয়।
'এ আয়াতে সরলপথের (হিদায়াতের জন্য) যে আবাদেন আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, এর আবেদনকারী সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আলেমগণও'। [মা'আরিফুল কুরআন]
এই আয়াতের সার্বিক অর্থ এই দাঁড়ায় যে, (হে আল্লাহ) আমাদেরকে সঠিক পথের দিকে নির্দেশ করো, এ পথে চলার তাওফীক্ব দাও এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো, যাতে যাতে আমরা তোমার সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। [আহসানুল বায়ান]
অর্থাৎ, জীবনের অসংখ্য পথের মধ্য থেকে চিন্তা ও কর্মের, সরল ও সুস্পষ্ট পথটি আমাদের দেখাও, যাতে বিভিন্ন চিন্তা-দর্শনের মধ্য থেকে যথার্থ ও নির্ভুল নৈতিক চিন্তা-দর্শন (ইসলাম) আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয় এবং তা আমরা গ্রহণ করে নেই।
তথ্যসূত্র:
-
তাফসীর ইবনে কাছীর
-
মা'আরিফুল কুরআন
-
আহসানুল বায়ান